কোপার্নিকান বিপ্লব বলতে কি বোঝ ?
আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যার নাম প্রথমেই উচ্চারিত হবে তিনি হলেন একজন পোলিশ যাজক নিকোলাস কোপার্নিকাস (1473-1543)। রক্ষণশীল যাজক সম্প্রদায়ের অংশ হয়েও তিনি তার গবেষণার মধ্য দিয়ে চিরাচরিত পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণাকে বাতিল করে আধুনিক কসমোলজির সূচনা করেন। এই ঘটনাই কোপার্নিকান বিপ্লব নামে পরিচিত।
নিকোলাস কোপার্নিকাস
কোপার্নিকাসের আগে, খ্রিস্টীয় ধ্যান-ধারণার সঙ্গে সমন্বয়িত অ্যারিস্টটল ও টলেমির সৃষ্টিতত্ত্বই মান্যতা পেত। মনে করা হত যে, পৃথিবী অন্তরীক্ষের জ্যোতির্মন্ডলীর বাইরে অবস্থানরত এক মাটির জগৎ। বিপুল বিশ্বকে দ্যুলোক ও ভুলোকে বিভক্ত করে রাখা হত। দ্যুলোকে অবস্থানরত গ্রহ নক্ষত্র রাজি স্বর্গীয় ইথার দ্বারা নির্মিত। এগুলি অপরিবর্তনীয় অক্ষয় এবং এর গতি সংক্রান্ত নিয়মাবলী পৃথিবীতে অজ্ঞাত ও অপ্রাসঙ্গিক। আর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ মনে করত যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে অবস্থিত নিশ্চল পৃথিবী এবং সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
কোপার্নিকাস তার গবেষণায় ( On the Revolutions of the Heavenly Spheres -- 1543) দেখালেন যে, পৃথিবী নয়, সূর্যই সৌরজগতের কেন্দ্র এবং পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহগুলি তাকেই প্রদক্ষিণ করে চলেছে। পৃথিবী কসমসের একটা অঙ্গ। মহাকাশের অন্যান্য গ্রহ সমূহের মতই তার অবস্থান। তিনি আরও জানালেন যে, শুক্রগ্রহের কক্ষপথের বাইরে এবং মঙ্গলের প্রদক্ষিণ পথের মধ্যেই পৃথিবীর আবর্তন পথ (Cosmographic Mystery)। তার পূর্বসূরিদের অভিকর্ষ (Gravity) সংক্রান্ত বক্তব্য বাতিল করলেন। পূর্বসূরী এরিস্টটলের বক্তব্য ছিল যে, মহাবিশ্বের কেন্দ্রে যেহেতু পৃথিবী অবস্থিত তাই মহাজাগতিক উপাদানগুলি পৃথিবীর কেন্দ্রের আকর্ষনে কোন কিছুর দ্বারা ব্যাহত না হয়ে নেমে আসে এবং এর ফলেই পৃথিবী গোলাকার আকৃতি পেয়েছে। কোপার্নিকাস বলেন, পৃথিবী সহ প্রতিটি গ্রহের নিজস্ব একটা অভিকর্ষের কেন্দ্র থাকায় পতনশীল বস্তুসমূহের পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসার কোন প্রশ্ন ওঠেনা (New Astronomy-- কেপলার)। কোপার্নিকাস আরো জানালেন যে, কেন্দ্রে অবস্থিত সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে এক বছর। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব বিস্ময়কর হলেও নক্ষত্রসমূহের থেকে তার দূরত্ব আরো বহু সহস্রগুণ বেশি।
কোপার্নিকাসের গবেষণা কেবল জ্যোতির্বিজ্ঞানের অতীত ও সর্বজনীন ধারণার সঙ্গেই চিরবিচ্ছেদ ঘটেনি, তা সৌরকেন্দ্রিক গবেষণার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের প্রেরণা যুগিয়েছিল। কোপার্নিকাস ছিলেন ভিত্তি। পরবর্তীকালে তারই গবেষণার উপরে কেপলার গ্যালিলিও এবং নিউটনের মত মহান বিজ্ঞানীর আবির্ভাব হয়ে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন