আধুনিক বিজ্ঞানে গ্যালিলিওর অবদান আলোচনা কর।
কোপারনিকাস ও কেপলারের পর বিজ্ঞান বিপ্লবের তৃতীয় প্রধান চরিত্র হলেন গ্যালিলিও গ্যালিলি(১৫৬৪-১৬৪২)। পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামরিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন তিনি। মহাকাশ গবেষণায় তিনি তার নিজের হাতে তৈরি দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে কোপার্নিকাসের ধারণাকে অভ্রান্ত প্রমাণ করেন এবং পতনশীল বস্তু সম্পর্কে এরিস্টটলের বক্তব্য ভুল প্রমাণ করে নতুন তত্ত্ব তুলে ধরেন।
গ্যালিলিও
পতনশীল বস্তুর গতি সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের বক্তব্য ছিল, কোন একটি পদার্থের ওজনের ওপর নির্ভর করে তার গতি। ফলে একটি জিনিসের মাটিতে পড়ার গতি একটি হালকা জিনিসের থেকে দ্রুততর হয়। 1592 সালে গ্যালিলিও The Motion (De Motu) গ্রন্থে অ্যারিস্টোটলের এই ধারণার বিরোধিতা করলেন এবং বললেন যে, প্রত্যেকটি পদার্থের একটি নির্দিষ্ট ওজন আছে এবং একটি বিশেষ মাধ্যম দিয়ে যদি একটি পদার্থ চলে যায় সেই চলার গতি নির্ভর করে মাধ্যমটির ঘনত্বের উপর। পদার্থের ওজনের তারতম্য এখানে গতি নির্ধারণ করে না।
কোপার্নিকাসের সমর্থক ছিলেন গ্যালিলিও। তিনি তাঁর নিজের তৈরি দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে আবিষ্কার করলেন যে, কোপার্নিকাসের ধারনাই অভ্রান্ত। তিনি দেখালেন চাঁদ গতিশীল। দূরের তারাগুলিরও গতি আছে, যা দূর থেকে দেখে বোঝা সম্ভব নয়। শুক্রের গায়ে চাঁদের মতন কতগুলি দাগ তিনি আবিষ্কার করলেন। তিনি আরো বললেন চাঁদ পৃথিবীর মতোই বাহ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি। তিনি শনির বলয় আবিষ্কার করলেন। বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করলেন। সূর্যের গায়ে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির দাগগুলিকে তিনি বললেন, এগুলি চলমান গ্রহের ছায়া। দূরবীনে সেগুলি কখনো দৃশ্যমান হয় কখনো অদৃশ্য হয়ে যায়। তিনি আরো বললেন প্রত্যেক গ্রহের একটা ঘন আস্তরণ রয়েছে। কিন্তু সেগুলির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। তাঁর প্রত্যেকটি আবিষ্কার এরিস্টোটল ও টলেমির সৌর জগত সম্পর্কিত মতামতকে খণ্ডন করেছিল ।
স্বাভাবিকভাবেই গ্যালিলিও ও তার আবিষ্কার মধ্যযুগীয় চার্চকে অসন্তুষ্ট করেছিল। গ্যালিলিও অবশ্য আগে থেকেই তা জানতেন এবং এ জন্যই তাকে বারবার দেখা গেছিল রাজার অনুগ্রহ লাভ এবং দ্বিতীয় আরবান এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা অর্জনে সচেষ্ট হতে। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি যে রাজার অনুগ্রহের কোন স্থিরতা নেই। তাই 1633 তাকে কোপার্নিকাসের নিষিদ্ধ তত্ত্ব প্রচারের দোষে অভিযুক্ত করা হয়। বন্ধু পোপ দ্বিতীয় আরবান বন্ধুত্ত্ব রক্ষার থেকে ধর্মরক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিলেন। তাকে বন্দী করা হল। পরে তিনি মুচলেকা দিয়ে ফ্লোরেন্সে ফিরে গেলেন এবং বাকি জীবন গৃহবন্দী হয়ে কাটিয়ে দিলেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন