সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

রাজপুত জাতির উত্থান প্রসঙ্গে বিতর্ক

রাজপুত জাতির উত্থান প্রসঙ্গে বিতর্ক সপ্তম থেকে দ্বাদশ  শতক পর্যন্ত ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে রাজপুতদের  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সমকালীন সাহিত্যে প্রায় 36 টি রাজপুত গোষ্ঠীর কথা জানা যায়। এদের মধ্যে অন্যতম হল- গুর্জর, প্রতিহার, চৌহান, পরমার, শিশোদিয়া, সোলাঙ্কি, চান্দেল্ল, তোমর, কলুচুরি, গহরবল প্রভৃতি। স্বাধীনতাপ্রিয়, দেশপ্রেমিক এবং হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির রক্ষাকর্তা হিসেবে রাজপুতরা সুবিদিত। তবে তাদের প্রধান দুর্বলতা ছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং অনৈক্য। রাজপুতদের উত্থান হয়েছে কিভাবে, তারা দেশি না বিদেশি এই নিয়ে বিতর্ক আছে। ঐতিহাসিক গৌরী শংকর হীরাচাঁদ ওঝা, দশরথ শর্মা প্রমুখ মনে করেন, রাজপুতরা এদেশীয়। তাদের আচার আচরণের সঙ্গে বিদেশি শক, হুন ও গুর্জরদের কিছু মিল থাকলেও তারা আসলে আর্য। কারণ তারা অশ্বমেধ যজ্ঞ করে, সতীদাহ প্রথা মেনে চলে এবং সূর্যের পূজা করে। মেবারের শিশোদিয়ারা নিজেদেরকে পরিচয় দেয় রামচন্দ্রের বংশধর বলে। গুর্জর প্রতিহাররা নিজেদের লক্ষণের বংশধর বলে মনে করে। রামায়ণ-মহাভারতের সূর্যবংশীয়- চন্দ্রবংশীয় রাজাদের সাথে রাজপুতদের  যোগাযোগের কথাও বলা হয়ে থাকে।...

ভারতের ইতিহাসে যুগবিভাজন

ভারতের ইতিহাসে যুগবিভাজন ভারতের ইতিহাসে যুগবিভাগ একটি জটিল ও বিতর্কিত বিষয়। প্রাচীন ঐতিহ্য পুরানে চক্রাকার কালচেতনা বিদ্যমান। কিন্তু ইউরোপীয় ধারণায় সময় হল রৈখিক। আধুনিক ইতিহাসচর্চায় অবশ্য এই রৈখিক কালচেতনাকেই গ্রহণ করা হয় এবং সেই ভাবেই ইতিহাসের যুগ বিভাজন করা হয়। ইতিহাস বলতে বোঝায় সেই বিষয়কে যা মানুষের ক্রমবিবর্তনের ধারাবাহিক বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতাকে যদি আমরা মানি তাহলে যুগ বিভাজন অযৌক্তিক হয়ে দাড়ায়। কারণ যুগবিভাজন করতে হলে কোন একটি নির্দিষ্ট দিন বা বছর থেকে একটা নতুন যুগের সূচনা এবং আগেরটির সমাপ্তি মেনে নিতে হয়। আর মানব সভ্যতার বিবর্তন  ধীর অথচ চলমান একটি প্রক্রিয়া, যাকে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়ে বিচার করা যায় না। তবুও আলোচনার সুবিধার জন্য আমরা সমগ্র ইতিহাস কে বিভিন্ন পর্বে বিভক্ত করে, ভিন্ন ভিন্ন যুগ হিসেবে চিহ্নিত করে চর্চা করে থাকি। পুরান ঐতিহ্য 'কাল'কে চারটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে: সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর এবং কলি। সত্যযুগ সবচেয়ে উৎকৃষ্ট যুগ এবং কলিযুগ সবচেয়ে ঘৃণ্যতর। প্রতিটি পরবর্তী যুগ তার পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় অ...

বিজ্ঞান বিপ্লব ও আধুনিক শরীর বিজ্ঞান

বিজ্ঞান বিপ্লব ও আধুনিক শরীর বিজ্ঞান বিজ্ঞান বিপ্লবের সময় বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি শুধু দূর আকাশেই নিবদ্ধ ছিল না, তা মানবদেহের প্রতিও অভিনিবিষ্ট করেছিল। মানুষ নিজেই ছিল এক ক্ষুদ্র বিশ্ব-- এক অনুবিশ্ব। এহেন মানব দেহ কিভাবে কাজ করে তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছিলেন একের পর এক গ্রিক ডাক্তার যাদের কূলচূড়ামণি হিসাবে অবশেষে আবির্ভূত হন গ্যালেন। গ্যালেন এর তত্ত্ব টলেমির মহাকাশ বর্ণনার মতোই আপ্ত-মর্যাদা লাভ করেছিল। কিন্তু আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় গ্যালেন তত্ত্বের বহু ভুল সামনে এলো এবং শরীর বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটে গেল। কোপার্নিকাস যখন সৌরকেন্দ্রিক ব্রম্ভান্ডের চিত্র আঁকছিলেন তখন পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্দ্রিয়াস ভেসালিয়াস (1514-64) শব ব্যবচ্ছেদ করে মানব শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দিলেন (De Humani Corporis Fabrica-- 1543)। ফলে গ্যালেনের শরীরতত্ত্ব এর বহু ভ্রান্তি দূর হল। আন্দ্রেয়াস ভেসলিয়াসের  রেখাচিত্র ইংরেজ বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্ভে (1587-1657) শরীরে রক্ত চলাচলের একটি বলবিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। গ্যালেনের মত অনুযায়ী সকলেই বিশ্বাস করত যে, শির...

আধুনিক বিজ্ঞানে গ্যালিলিওর অবদান আলোচনা কর।

আধুনিক বিজ্ঞানে গ্যালিলিওর অবদান আলোচনা কর। কোপারনিকাস ও কেপলারের পর বিজ্ঞান বিপ্লবের তৃতীয় প্রধান চরিত্র হলেন গ্যালিলিও গ্যালিলি(১৫৬৪-১৬৪২)। পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামরিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন তিনি। মহাকাশ গবেষণায় তিনি তার নিজের হাতে তৈরি দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে কোপার্নিকাসের ধারণাকে অভ্রান্ত প্রমাণ করেন এবং পতনশীল বস্তু সম্পর্কে এরিস্টটলের বক্তব্য ভুল প্রমাণ করে নতুন তত্ত্ব তুলে ধরেন। গ্যালিলিও পতনশীল বস্তুর গতি সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের বক্তব্য ছিল, কোন একটি পদার্থের ওজনের ওপর নির্ভর করে তার গতি। ফলে একটি জিনিসের মাটিতে পড়ার গতি একটি হালকা জিনিসের থেকে দ্রুততর হয়। 1592 সালে গ্যালিলিও The Motion (De Motu) গ্রন্থে অ্যারিস্টোটলের এই ধারণার বিরোধিতা করলেন এবং বললেন যে, প্রত্যেকটি পদার্থের একটি নির্দিষ্ট ওজন আছে এবং একটি বিশেষ মাধ্যম দিয়ে যদি একটি পদার্থ চলে যায় সেই চলার গতি নির্ভর করে মাধ্যমটির ঘনত্বের উপর। পদার্থের ওজনের তারতম্য এখানে গতি নির্ধারণ করে না। কোপার্নিকাসের সমর্থক ছিলেন গ্যালিলিও। তিনি তাঁর নিজের তৈরি দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে আবিষ্কার করলেন য...

কোপার্নিকান বিপ্লব বলতে কি বোঝ ?

কোপার্নিকান বিপ্লব বলতে কি বোঝ ? আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যার নাম প্রথমেই উচ্চারিত হবে তিনি হলেন একজন পোলিশ যাজক নিকোলাস কোপার্নিকাস (1473-1543)। রক্ষণশীল যাজক সম্প্রদায়ের অংশ হয়েও তিনি তার গবেষণার মধ্য দিয়ে চিরাচরিত পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণাকে বাতিল করে আধুনিক কসমোলজির সূচনা করেন। এই ঘটনাই কোপার্নিকান বিপ্লব নামে পরিচিত। নিকোলাস কোপার্নিকাস কোপার্নিকাসের আগে, খ্রিস্টীয় ধ্যান-ধারণার সঙ্গে সমন্বয়িত অ্যারিস্টটল ও টলেমির সৃষ্টিতত্ত্বই মান্যতা পেত। মনে করা হত যে, পৃথিবী অন্তরীক্ষের জ্যোতির্মন্ডলীর বাইরে অবস্থানরত এক মাটির জগৎ। বিপুল বিশ্বকে দ্যুলোক ও ভুলোকে বিভক্ত করে রাখা হত। দ্যুলোকে অবস্থানরত গ্রহ নক্ষত্র রাজি স্বর্গীয় ইথার দ্বারা নির্মিত। এগুলি অপরিবর্তনীয় অক্ষয় এবং এর গতি সংক্রান্ত নিয়মাবলী পৃথিবীতে অজ্ঞাত ও অপ্রাসঙ্গিক। আর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ মনে করত যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে অবস্থিত নিশ্চল পৃথিবী এবং সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। কোপার্নিকাস তার গবেষণায় ( On the Revolutions of the Heavenly Spheres -- 1543) দেখালেন যে...

রাজকীয় ভুমিদান বলতে কি বোঝ? ভারতীয় অর্থনীতি ও রাজনীতিকে এর প্রভাব

রাজকীয় ভুমিদান বলতে কি বোঝ? খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতক থেকে সপ্তম শতক পর্যন্ত ভারতীয় অর্থনীতি ও রাজনীতিকে এই ব্যবস্থা কিভাবে প্রভাবিত করেছিল? খ্রিষ্টীয় চতুর্থ থেকে সপ্তম শতক এবং তার পরবর্তীকালে সমগ্র আদিমধ্য যুগ জুড়ে ভারতীয় অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি ছিল অগ্রাহার তথা রাজকীয় ভুমিদান ব্যবস্থা। মন্দির, দেবালয় বা বৌদ্ধ মঠ এর উদ্দেশ্যে এবং ব্রাহ্মণ পুরোহিতের উদ্দেশ্যে নিষ্কর সম্পত্তি দানের ব্যবস্থা অগ্রাহার নামে পরিচিত। সংখ্যায় কম হলেও ধর্মনিরপেক্ষ ভুমিদানও ছিল। অবশ্য ব্রাহ্মনকে ভুমিদান করার নজির সবচেয়ে বেশি। ভূমিদান দুই প্রকার: কখনো সরাসরি রাজকীয় দান হিসেবে ভূমি হস্তান্তরিত হত। কখনও ব্যক্তিবিশেষ পূণ্য অর্জনের জন্য রাজার থেকে জমি ক্রয় করে দান করতেন। সাধারণত রাজকীয় 'শাসন' হিসেবে ভূসম্পদ হস্তান্তরের ঘটনা উৎকীর্ণ করা হত। ব্রাহ্মণ এর উদ্দেশ্যে দান করা হলে তাকে ব্রহ্মদেও এবং মন্দিরে উদ্দেশ্যে দান করা হলে তাকে দেবদান বলা হত। রাজকীয় জমি দানের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে। মহাভারতে দানধর্ম পর্বে তিন প্রকার দানের কথা বলা হয়েছেঃ হিরণ্যদান, গোদান, এবং পৃথিবীদান...

আকবরের ধর্মনীতির বিবর্তন

আকবরের ধর্মনীতির বিবর্তন আলোচনা কর। মুঘল শাসকদের মধ্যে ধর্ম বিষয়ে সবচেয়ে উদার মানসিকতার অধিকারী ছিলেন আকবর। রাষ্ট্রপরিচালনায় আকবরের পরধর্মসহিষ্ণুতার নীতি সুল-ই-কুল নামে পরিচিত। সুলতানি যুগ থেকে ভক্তি ও সুফিবাদী সাধকেরা যে সমন্বয়বাদী চিন্তাধারার প্রচলন করেছিলেন আকবরের ধর্মনীতি ছিল তারই ফলশ্রুতি। আকবর উপলব্ধি করেছিলেন যে, বিশাল ভারতবর্ষ এর সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ হল হিন্দু। তাদের সহযোগিতা ছাড়া ভারতবর্ষে শক্তিশালী শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই তার পক্ষে সহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণ না করে কোন উপায়ও ছিল না। Related posts মহজরনামা || ইবাদতখানা || উলেমা ও আকবর || সম্রাট আকবর আকবর তার প্রথম জীবনে ধর্মভীরু মুসলমান ছিলেন। নিয়মিত রোজা নামাজ পালন করতেন। ১৫৬২ খ্রিস্টাব্দে আজমীর থেকে ফেরার পথে তিনি অম্বরের রাজা ভরমলের কন্যাকে বিবাহ করেন। এরপর থেকেই তিনি এমন কিছু পদক্ষেপ নেন যার মাধ্যমে হিন্দু জনতার মন জয় করতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যেই তিনি 1563 খ্রিস্টাব্দে তীর্থযাত্রা কর রদ করেন। পরের বছরই জিজিয়া কর রদ করেন। এই দুটি পদক্ষেপ তাকে রাজপুতদের সমর্থন অর্জনে সাহায্য করেছিল। দ্বিতীয় পর্য...