সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঝরোকা দর্শন কি?

ঝরোকা দর্শন কি?

Abdul Mojaffar Mondal,
Assistant Professor, Sonarpur Mahavidyalaya

মুঘল সম্রাটদের প্রত্যহ প্রজাদের দর্শন দেওয়ার প্রথা ঝরোকা দর্শন নামে পরিচিত। আবুল ফজল ও আব্দুল হামিদ লাহোরীর রচনা থেকে জানা যায় আকবর এই ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, যাতে তার প্রজারা বিনা বাধায় সম্রাটের কাছে এসে তাদের নিজেদের কথা বলতে পারে। তিনি যখন রাজধানীতে থাকতেন তখন প্রত্যেকদিন সকালে 'খোয়াবগাহ' অর্থাৎ রাতে তিনি যে গৃহে ঘুমাতেন তার বাইরের বারান্দায় এসে প্রজাদের কথা শোনার জন্য দাঁড়াতেন। বদাউনি অবশ্য লিখেছেন হিন্দুরা সম্রাটকে মর্ত্যে ঈশ্বরের প্রতিনিধি ভেবে ভক্তি প্রদর্শন করত। সেই ভক্তি নিবেদন স্বরূপ তারা প্রত্যহ সম্রাটের দর্শন পেতে চাইতেন এবং দর্শন পেলেই তবে সকালের জল গ্রহণ করতেন।

আকবর এবং জাহাঙ্গীর ঝরোকা দর্শন-এ প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা সময় দিতেন। ইউরোপীয় পর্যটকদের বিবরণ থেকে জানা যায় জাহাঙ্গীর ঝরোকা দর্শনের শুরুতে উদীয়মান সূর্যকে অভিবাদন জানাতেন। তারপর মনসবদার এবং সাধারন প্রজা বাদশার জয়ধ্বনি করতেন। এরপর তিনি প্রজাদের অভাব-অভিযোগ শুনতেন। জাহাঙ্গীর এভাবেই দ্রুত কিছু বিবাদের বিচার করে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। শাহজাহান অবশ্য ঝরোকা দর্শনে বিচারের প্রথাটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রজাদের কাছ থেকে অভিযোগ নিতে বন্ধ করেননি। প্রজা-সাক্ষাৎ ছাড়াও ঝরোকা দর্শনে অন্য কিছু কাজ সারা হত। যেমন আকবর ঝরোকাতেই মনসবদারদের পেশ করা সেনাদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করে নিতেন বা বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ঘোড়া পর্যবেক্ষণ করতেন। আকবর ও জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল হাতির লড়াই দেখার উল্লেখও আমরা পাই।

আওরঙ্গজেব তাঁর রাজত্বের একাদশতম বর্ষে ঝরোকা দর্শন প্রথা বন্ধ করে দেন কারণ, ওঁর মতে এটি মানুষকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করার সমান। তাই এটি বাঞ্ছনীয় নয়। আওরঙ্গজেবের কঠোর যুক্তিকে অস্বীকার করা যায় না। তবে একথা সত্য যে, ঝরোকা দর্শন সম্রাট ও সাধারণ প্রজার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করতে পারত। এবং এর ফলে সাম্রাজ্যের মধ্যবর্তীরা যথেষ্ট ভয়ে থাকত।

মন্তব্যসমূহ

সবচেয়ে বেশি পঠিত প্রশ্নোত্তর

কোপার্নিকান বিপ্লব বলতে কি বোঝ ?

কোপার্নিকান বিপ্লব বলতে কি বোঝ ? আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যার নাম প্রথমেই উচ্চারিত হবে তিনি হলেন একজন পোলিশ যাজক নিকোলাস কোপার্নিকাস (1473-1543)। রক্ষণশীল যাজক সম্প্রদায়ের অংশ হয়েও তিনি তার গবেষণার মধ্য দিয়ে চিরাচরিত পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণাকে বাতিল করে আধুনিক কসমোলজির সূচনা করেন। এই ঘটনাই কোপার্নিকান বিপ্লব নামে পরিচিত। নিকোলাস কোপার্নিকাস কোপার্নিকাসের আগে, খ্রিস্টীয় ধ্যান-ধারণার সঙ্গে সমন্বয়িত অ্যারিস্টটল ও টলেমির সৃষ্টিতত্ত্বই মান্যতা পেত। মনে করা হত যে, পৃথিবী অন্তরীক্ষের জ্যোতির্মন্ডলীর বাইরে অবস্থানরত এক মাটির জগৎ। বিপুল বিশ্বকে দ্যুলোক ও ভুলোকে বিভক্ত করে রাখা হত। দ্যুলোকে অবস্থানরত গ্রহ নক্ষত্র রাজি স্বর্গীয় ইথার দ্বারা নির্মিত। এগুলি অপরিবর্তনীয় অক্ষয় এবং এর গতি সংক্রান্ত নিয়মাবলী পৃথিবীতে অজ্ঞাত ও অপ্রাসঙ্গিক। আর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ মনে করত যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে অবস্থিত নিশ্চল পৃথিবী এবং সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। কোপার্নিকাস তার গবেষণায় ( On the Revolutions of the Heavenly Spheres -- 1543) দেখালেন যে...

গ্লাসনস্ত ও পেরেসট্রয়িকা কি? ঠান্ডা যুদ্ধের প্রশমনে এগুলোর ভূমিকা কি?

গ্লাসনস্ত ও পেরেসট্রয়িকা কী? গ্লাসনস্ত ও পেরেসট্রয়িকা গ্লাসনস্ত ও পেরেসট্রয়িকা : গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রইকা শব্দ দুটি রুশ ভাষার অন্তর্ভুক্ত। গ্লাসনস্ত শব্দের অর্থ মুক্ত চিন্তা এবং পেরেস্ত্রইকা শব্দের অর্থ পুনর্গঠন । গ্লাসনস্ত ও পেরেসট্রয়িকার পটভূমি : ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কার্যকরী করার জন্য কমিউনিস্ট সরকার। এই সরকারের মূলনীতি ছিল সম্পদের উপর সামাজিক মালিকানা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করে একটি শোষণহীন সমাজ ও অর্থ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এই অর্থ ব্যবস্থা ছিল ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থার বিপরীত একটি ব্যবস্থা। ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফলে যে ধানতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই আর্থিক ব্যবস্থা রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষক দেশ আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার মতাদর্শ গত দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্ব অর্থনৈতিক পরিসরের গণ্ডি পেরিয়ে ক্রমশ রাজনৈতিক চেহারা নেয়। ফলে শুরু হয় আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে ঠান্ডা লড়াই বা কোল্ড ওয়ার। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ঠান্ডা লড়াইয়ের ফল...

আধুনিক বিজ্ঞানে গ্যালিলিওর অবদান আলোচনা কর।

আধুনিক বিজ্ঞানে গ্যালিলিওর অবদান আলোচনা কর। কোপারনিকাস ও কেপলারের পর বিজ্ঞান বিপ্লবের তৃতীয় প্রধান চরিত্র হলেন গ্যালিলিও গ্যালিলি(১৫৬৪-১৬৪২)। পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামরিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন তিনি। মহাকাশ গবেষণায় তিনি তার নিজের হাতে তৈরি দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে কোপার্নিকাসের ধারণাকে অভ্রান্ত প্রমাণ করেন এবং পতনশীল বস্তু সম্পর্কে এরিস্টটলের বক্তব্য ভুল প্রমাণ করে নতুন তত্ত্ব তুলে ধরেন। গ্যালিলিও পতনশীল বস্তুর গতি সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের বক্তব্য ছিল, কোন একটি পদার্থের ওজনের ওপর নির্ভর করে তার গতি। ফলে একটি জিনিসের মাটিতে পড়ার গতি একটি হালকা জিনিসের থেকে দ্রুততর হয়। 1592 সালে গ্যালিলিও The Motion (De Motu) গ্রন্থে অ্যারিস্টোটলের এই ধারণার বিরোধিতা করলেন এবং বললেন যে, প্রত্যেকটি পদার্থের একটি নির্দিষ্ট ওজন আছে এবং একটি বিশেষ মাধ্যম দিয়ে যদি একটি পদার্থ চলে যায় সেই চলার গতি নির্ভর করে মাধ্যমটির ঘনত্বের উপর। পদার্থের ওজনের তারতম্য এখানে গতি নির্ধারণ করে না। কোপার্নিকাসের সমর্থক ছিলেন গ্যালিলিও। তিনি তাঁর নিজের তৈরি দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে আবিষ্কার করলেন য...