সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আরবদের সিন্ধু অভিযান : কারণ ও ফলাফল (তাৎপর্য)

আরবদের সিন্ধু অভিযান : কারণ ও ফলাফল (তাৎপর্য)

Arab invasion of Indus: Causes and Results (Significance)
আরবদের সিন্ধু অভিযান : কারণ ও ফলাফল (তাৎপর্য)

Arab invasion of Indus: Causes and Results (Significance)

ঐতিহাসিক উপাদান: আরব মুসলমানদের বিভিন্ন দিকে সাম্রাজ্যবিস্তার সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্যের অভাব নেই। কিন্তু ভারতে তাদের অভিযান সম্পর্কিত ঐতিহাসিক উপাদান কম। আল-বিলাদুরি গ্রন্থে আরবদের ভারত অভিযানের বর্ণনা থাকলেও এতে সঠিক ঘটনাক্রম পাওয়া যায় না। আল-তারি ও খুলাসাৎ-উল-আকবর এক্ষেত্রে দুটি সহায়ক গ্রন্থ। পরবর্তীকালের দুটি গ্রন্থ তারিখ-এ-সিন্ধ ও তুহফাৎ-উল- কিরাণ গ্রন্থে আরবদের সিন্ধু বিজয়ের বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ আছে। তাছাড়া চাচ্নামা নামে এক গ্রন্থ থেকেও এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।

আরবদের সিন্ধু অভিযান : কারণ

আরবদের সিন্ধু অভিযানের কারণ নিয়ে ঐতিহাসিকগণ একমত নন। অধিকাংশ ঐতিহাসিক খলিফাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের বৃহত্তর পরিকল্পনার অঙ্গ হিসাবে সিন্ধু অভিযানকে দেখেছেন।

১) ধনলিপ্সা ও লুণ্ঠনের প্রতি আগ্রহ :

৬৪৪ খ্রীঃ-এর মধ্যে আরবগণ পারস্য অধিকার করে। ৬৫০ খ্রীঃ-এর মধ্যে অক্ষুনদী ও হিন্দুকুশ পর্বতের মধ্যবর্তী অঞ্চল তারা দখল করে নেয়। আরব সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলের শাসনকর্তা হজ্জাজ-বিন-ইউসুফের নেতৃত্বে আরব সেনা মধ্যএশিয়ার বোখারা, সমরখন্দ ও ফরঘনা অঞ্চল জয় করে নেয়। অতএব এই পরিস্থিতিতে ভারতের ওপর আরব-শাসকদের দৃষ্টি পড়বে তা ছিল প্রত্যাশিত। অনেকে এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন আরবদের ধনলিপ্সা ও লুণ্ঠনের প্রতি আগ্রহকে। খ্রীঃ অষ্টম শতাব্দীর বহু পূর্ব থেকেই আরব বণিকগণ ভারতের পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলির সঙ্গে বাণিজ্যে লিপ্ত ছিল। ভারতের সম্পদ ও ঐশ্বর্যের প্রতি তারা প্রলুব্ধ হবে এ ছিল স্বাভাবিক। অনেক ভারতীয় নৃপতি আরব বণিকদের নানান বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধাও প্রদান করেছিল। এর ফলে ভারতের প্রতি তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে তার ধনসম্পত্তি হস্তগত করা ছিল ইসলামসম্মত। লুণ্ঠিত সামগ্রী সরকার ও সেনার মধ্যে শরিয়তী বিধি খাম্স অনুসারে বণ্টিত হত। এর ফলে আরব সেনারা লুণ্ঠনকার্যে আরও উৎসাহিত বোধ করত। আরনল্ডের মতো কিছু ঐতিহাসিক সিন্ধু অভিযানের পেছনে লুণ্ঠন তত্ত্বের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দিলেও চাচনামার মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক রচনায় এ ধরনের কিছুর উল্লেখ নেই।

২) আরবদের বাণিজ্য বিস্তার :

আরবদের সিন্ধু অভিযানের অন্যতম কারণ যে বাণিজ্য বিস্তার, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ভারতীয় মশলা, রেশম ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর ইওরোপের বাজারে প্রচুর চাহিদা ছিল। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যের ওপর আরব বণিকদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে ভারতের সঙ্গে ইওরোপের বাণিজ্যে তারা মধ্যস্থের বাণিজ ভূমিকা পালন করে। অতএব ভারতের কোন ভূখণ্ড আরব অধিকারে এলে তা বাণিজ্যিক স্বার্থের অনুকূল হতে পারে, এ কথা আরব নীতি-নির্ধারকদের তানেকে হয়ত মনে করতে পারেন। 

৩) ইসলাম ধর্মের প্রচার :

কেউ কেউ সিন্ধু অভিযানের পেছনে ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যের ওপর জোর দিয়েছেন। 

৪) রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য :

এখানে মনে রাখা প্রয়োজন দক্ষিণ ভারতে আরবদের সামরিক অভিযানের অনেক আগে থেকেই আরব মুসলমান বণিক বসতি স্থাপন করে, এমনকি মসজিদও নির্মাণ করে। স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। হিন্দুরাজাগণও তাদের ধর্মাচরণের পূর্ণ অধিকার দেন। এমনকি সিন্ধুরাজের প্রশাসনিক ও সেনা বিভাগেও কিছু সংখ্যক আরব নিযুক্ত ছিল। অতএব ভারতের বুকে এই প্রথম মুসলমান সামরিক অভিযানের কারণটি শুধুমাত্র ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্য দিয়ে ব্যাখ্যা করলে অতিসরলীকরণ হয়ে যায়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল মুখ্য যদিও এর সঙ্গে ধর্মীয় উদ্দীপনা যুক্ত হয়ে অভিযানের পক্ষে এক অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল।

৫) সিন্ধু অভিযানের কিছু প্রত্যক্ষ কারণ :

আরব শাসনকর্তা হজ্জাজের সিন্ধু অভিযানের কিছু প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। 
  1. খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর গোড়ায় সিংহলরাজ কর্তৃক হজ্জাজের উদ্দেশে জাহাজে প্রেরিত কিছু উপহার সামগ্রী সিন্ধু সংলগ্ন আরব সাগরে জলদস্যুদের দ্বারা লুণ্ঠিত হয়। এই ঘটনার জন্য হজ্জাজ সিন্ধুরাজ দাহিরকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। একটি মত অনুসারে লুণ্ঠিত জাহাজে সিংহলে অবস্থানকালে মৃত কিছু আরব বণিকের নিরাশ্রয় কন্যারা ছিল। অপর একটি মত অনুসারে ক্রীতদাসী ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রী ক্রয়ের উদ্দেশ্যে খলিফা তাঁর বিশ্বস্ত যে অনুচরদের ভারতে প্রেরণ করেছিলেন, তাদের জাহাজ লুণ্ঠিত হয়েছিল। যাই হোক, লুণ্ঠিত জাহাজে কি ছিল তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও এই ঘটনার জন্য সিন্ধুরাজ দাহিরকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ দাবি করলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। 
  2. বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এ. কে. এম. আবদুল আলীম দাহিরের বিরুদ্ধে আরব মুসলমানদের বিরুদ্ধে পারস্যবাসীকে সাহায্য করা ও হজ্জাজ বিরোধী বিদ্রোহীদের সিন্ধুরাজ্যে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগের উল্লেখ করেছেন। এর পর তাঁর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান প্রেরণ করা হয়।

আরবদের সিন্ধু অভিযান :

হজ্জাজ প্রথমে ওবেদুল্লা ও পরে বুদাইল নামে দুই সেনাপতির অধীনে দুটি অভিযান প্রেরণ করেন। কিন্তু অভিযান দুটি ব্যর্থ হলে ও দুই সেনাপতি নিহত হলে ক্ষুব্ধ হজ্জাজ তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা মহম্মদ-বিন-কাশিমের নেতৃত্বে তৃতীয় অভিযান প্রেরণ করেন। ৭১১-৭১২ খ্রীঃ-এ আরব বাহিনী ইরাণ ও মাকরানের ভেতর দিয়ে সিন্ধুবন্দর দেবলে পৌঁছয়। অপর একদল আরবসেনা রসদ ও অস্ত্রশস্ত্রসহ জলপথে মূলবাহিনীকে সাহায্যার্থে অগ্রসর হয়। 'বলিস্ত' নামে এক প্রস্তর নিক্ষেপক অস্ত্র ব্যবহার করে আরবসেনা সুরক্ষিত দেবল বন্দর-নগরটি ধ্বংস করে দেয়। এর পর তারা নিরুণ, সিওয়ান অধিকার করে ৭১২ খ্রীঃ-এর মাঝামাঝি ব্রাহ্মণাবাদে পৌঁছয়। সেখানে সিন্ধুরাজ দাহিরের মূলবাহিনীর সঙ্গে মহম্মদ-বিন-কাশিমের সংঘর্ষ হয়। দাহির পরাজিত ও নিহত হন। কাশিম রাওয়ার দুর্গ আক্রমণ করলে দাহিরের পত্নী রানিবাঈ ও পুত্র জয়সিংহ প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুললেও শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হন। রানিবাঈ পরিচারিকাবৃন্দসহ জহরব্রত পালন করেন। জয়সিংহ আলোর ও ব্রাহ্মণাবাদে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও কিছু মন্ত্রী ও সামন্তরাজের বিশ্বাসঘাতকতায় শহর দুটি আরবদের হস্তগত হয়। এর পর কাশিম ৭১৩ খ্রীঃ-এ মূলতান অঞ্চল অধিকার করে নেন। কাশিমের শেষ অভিযান ছিল কনৌজের বিরুদ্ধে, কিন্তু তা সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই তাঁকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

আরবদের জয়ের কারণ:

কয়েকটি কারণে আরবসেনা সহজেই সিন্ধু অঞ্চল অধিকার করতে সমর্থ হয়। 
  1. যোগ্য নেতৃত্ব, উন্নতমানের সমরকৌশল : সেনাবাহিনীর সুষ্ঠু পরিচালনা, যোগ্য নেতৃত্ব, উন্নতমানের সমরকৌশল ও অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আরব বাহিনী সিন্ধুবাহিনীর থেকে অগ্রসর ছিল। আরব নৌবহরের সামনে দাহিরের নৌবাহিনীর দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে। 
  2. উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিরোধ : পারিবারিক বিবাদে সিন্ধুরাজপরিবার দুর্বল হয়ে পড়ে। দাহিরের সঙ্গে জ্যেষ্ঠভ্রাতা দাহারশিয়ার উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিরোধের ফলে সিন্ধু রাজ্য দুভাগে ভাগ হয়ে যায়। দাহারশিয়ারের মৃত্যুর পর দাহির সিন্ধুরাজ্যের ঐক্য ফিরিয়ে আনলেও বিপক্ষের সামন্তগণ তাঁকে মেনে নেয়নি। বরং তারা আরব আক্রমণকারীদের সমর্থন করেছিল। 
  3. দাহিরের পিতার শূদ্ররমণীকে বিবাহ : তাছাড়া দাহিরের পিতা চাচ ব্রাহ্মণ হয়েও শূদ্ররমণীকে বিবাহ করায় প্রজাবর্গের বিরাগভাজন হন। চাচ-পুত্র দাহিরকেও উচ্চবর্ণের মানুষ ও সামস্তবর্গের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। 
  4. জাতিভেদ প্রথার কড়াকড়ি : জাতিভেদ প্রথার কড়াকড়ির কারণে সিন্ধু সমাজ বহুধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। ব্রাহ্মণদের কঠোর অনুশাসনে বৈশ্য, শূদ্র, জাঠ, মেড এমনকি বৌদ্ধরাও নির্যাতিত হত। সমাজের এই বিক্ষুব্ধ অংশ আরব সেনাকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছে। এদের অনেকে পরবর্তীকালে ইসলামধর্মও গ্রহণ করেছে। 
  5. ধর্মোন্মত্ততার প্রভাব : সর্বোপরি, স্বয়ং খলিফার অনুপ্রেরণায় প্রেরিত অভিযানে ধর্মোন্মত্ততারও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

আরবদের সিন্ধু বিজয়ের ফলাফল:

আরবদের সিন্ধু বিজয়ের ফলাফল সম্পর্কে ইংরাজ ঐতিহাসিক স্ট্যানলি লেনপুল বলেছেন, এই বিজয় ভারত ও ইসলামের ইতিহাসে একটি আখ্যান মাত্র, এটি একটি নিষ্ফলা বিজয়। কেম্ব্রিজ ঐতিহাসিক উলস্ট্সি হেগও একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন, ভারতের ইতিহাসে এটি একটি আখ্যানের বেশি কিছু নয়, এই বিশাল দেশের একক্ষুদ্র অংশকে তা প্রভাবিত করেছিল। 

১) রাজনৈতিক গুরুত্ব অকিঞ্চিৎকর :

এ কথা সত্য যে রাজনৈতিক দিক থেকে আরবদের সিন্ধু বিজয় মূল ভারতীয় ইতিহাসকে কোন ভাবেই প্রভাবিত করতে পারেনি। কারণ সিন্ধু ভারতের এক প্রান্তে অবস্থিত ও সেখানকার আরব মুসলমান শাসকগণ চেষ্টা করেও ভারতের অভ্যন্তরভাগে প্রবেশ করতে পারেনি। কারণ চালুক্য ও প্রতিহার শক্তি ওই অঞ্চলে অনতিক্রম্য ছিল। অতএব রাজনৈতিক দিক থেকে আরবদের সিন্ধু বিজয় ছিল একটি অতি অকিঞ্চিৎকর ঘটনা।

২) বাণিজ্যিক গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী :

কিন্তু বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার কালে সিন্ধু অঞ্চলে আরবদের স্বল্পকালের শাসন আদৌ নিষ্ফলা ছিল না। দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা পশ্চিম উপকূলে আরবদের বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপ সিন্ধু বিজয়ের ফলে আরও সুদৃঢ় হয়। আরব বাণিকদের বাণিজ্য এই সময়ে সুদূর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। অপরদিকে সিন্ধু-দেশীয় বণিকগণ আরবদেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করে।

৩) শিল্প, ভাষা সাহিত্য ও শিক্ষায় অভূতপূর্ব  উৎকর্ষ লাভ :

  1. একথা সত্য যে আরবশাসকগণ কিছু সংখ্যক ভারতীয়কে ইসলামধর্মে ধর্মান্তরিত করেছিল।
  2. সিন্ধীভাষার উপর আরবী ভাষার প্রভাব পড়েছিল কারণ সিন্ধীভাষায় অনেক আরবী শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। 
  3. দীর্ঘকাল ভারতীয় হিন্দুদের পাশে বাস করে আরব মুসলমানগণ হিন্দু দর্শন, আয়ুর্বেদ শাস্ত্র, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, সঙ্গীত ও চিত্রকলার দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। আরব পণ্ডিত আবু মা'শর দীর্ঘ দশ বছরকাল বারাণসীতে হিন্দু বিজ্ঞানীদের কাছে জ্যোতির্বিদ্যা অধ্যয়ন করেন। 
  4. খলিফা মনসুরের উৎসাহে ব্রহ্মগুপ্ত রচিত জ্যোতির্বিদ্যার দুটি গ্রন্থ ব্রহ্মসিদ্ধান্ত ও খণ্ড-খাদ্যক আরবীভাষায় অনুদিত হয়। 
  5. খলিফা হারুন-অল-রশিদ ভারতীয় চিকিৎসকের দ্বারা রোগমুক্ত হন। ভারতীয় আয়ুর্বেদ আরবদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। 
  6. হিন্দু পণ্ডিত, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ, এমনকি রাজমিস্ত্রী সসম্মানে আরবদেশে আমন্ত্রিত হতেন। 
  7. আরবদেশীয় বিজ্ঞানীগণ ভারতীয় গাণিতিক সংখ্যাতত্ত্ব থেকে জ্ঞান অর্জন করেন। 
  8. ঐতিহাসিক হ্যাভেল যথার্থই মন্তব্য করেছেন, আরব সাহিত্য, স্থাপত্য, শিল্প ও অন্যান্য শিল্পকলা ভারতীয় উৎকর্ষতা লাভ করেছিল।

আরবদের সিন্ধু অভিযান তাৎপর্য :

অতএব রাজনৈতিক দিক থেকে আরবদের সিন্ধু বিজয় একটি অকিঞ্চিৎকর ঘটনা হলেও দুদেশের মধ্যে ভাববিনিময় ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে একে 'নিষ্ফলা বিজয়' আখ্যা দেওয়া ইতিহাসসম্মত নয়। উন্মেষপর্বের ইসলাম ভারতীয় সংস্কৃতি থেকে অনেক কিছুই গ্রহণ করেছিল।
-----------xx-----------

মন্তব্যসমূহ

সবচেয়ে বেশি পঠিত প্রশ্নোত্তর

আধুনিক বিজ্ঞানে গ্যালিলিওর অবদান আলোচনা কর।

আধুনিক বিজ্ঞানে গ্যালিলিওর অবদান আলোচনা কর। কোপারনিকাস ও কেপলারের পর বিজ্ঞান বিপ্লবের তৃতীয় প্রধান চরিত্র হলেন গ্যালিলিও গ্যালিলি(১৫৬৪-১৬৪২)। পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামরিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন তিনি। মহাকাশ গবেষণায় তিনি তার নিজের হাতে তৈরি দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে কোপার্নিকাসের ধারণাকে অভ্রান্ত প্রমাণ করেন এবং পতনশীল বস্তু সম্পর্কে এরিস্টটলের বক্তব্য ভুল প্রমাণ করে নতুন তত্ত্ব তুলে ধরেন। গ্যালিলিও পতনশীল বস্তুর গতি সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের বক্তব্য ছিল, কোন একটি পদার্থের ওজনের ওপর নির্ভর করে তার গতি। ফলে একটি জিনিসের মাটিতে পড়ার গতি একটি হালকা জিনিসের থেকে দ্রুততর হয়। 1592 সালে গ্যালিলিও The Motion (De Motu) গ্রন্থে অ্যারিস্টোটলের এই ধারণার বিরোধিতা করলেন এবং বললেন যে, প্রত্যেকটি পদার্থের একটি নির্দিষ্ট ওজন আছে এবং একটি বিশেষ মাধ্যম দিয়ে যদি একটি পদার্থ চলে যায় সেই চলার গতি নির্ভর করে মাধ্যমটির ঘনত্বের উপর। পদার্থের ওজনের তারতম্য এখানে গতি নির্ধারণ করে না। কোপার্নিকাসের সমর্থক ছিলেন গ্যালিলিও। তিনি তাঁর নিজের তৈরি দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে আবিষ্কার করলেন য

কোপার্নিকান বিপ্লব বলতে কি বোঝ ?

কোপার্নিকান বিপ্লব বলতে কি বোঝ ? আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যার নাম প্রথমেই উচ্চারিত হবে তিনি হলেন একজন পোলিশ যাজক নিকোলাস কোপার্নিকাস (1473-1543)। রক্ষণশীল যাজক সম্প্রদায়ের অংশ হয়েও তিনি তার গবেষণার মধ্য দিয়ে চিরাচরিত পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণাকে বাতিল করে আধুনিক কসমোলজির সূচনা করেন। এই ঘটনাই কোপার্নিকান বিপ্লব নামে পরিচিত। নিকোলাস কোপার্নিকাস কোপার্নিকাসের আগে, খ্রিস্টীয় ধ্যান-ধারণার সঙ্গে সমন্বয়িত অ্যারিস্টটল ও টলেমির সৃষ্টিতত্ত্বই মান্যতা পেত। মনে করা হত যে, পৃথিবী অন্তরীক্ষের জ্যোতির্মন্ডলীর বাইরে অবস্থানরত এক মাটির জগৎ। বিপুল বিশ্বকে দ্যুলোক ও ভুলোকে বিভক্ত করে রাখা হত। দ্যুলোকে অবস্থানরত গ্রহ নক্ষত্র রাজি স্বর্গীয় ইথার দ্বারা নির্মিত। এগুলি অপরিবর্তনীয় অক্ষয় এবং এর গতি সংক্রান্ত নিয়মাবলী পৃথিবীতে অজ্ঞাত ও অপ্রাসঙ্গিক। আর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ মনে করত যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে অবস্থিত নিশ্চল পৃথিবী এবং সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। কোপার্নিকাস তার গবেষণায় ( On the Revolutions of the Heavenly Spheres -- 1543) দেখালেন যে

গ্লাসনস্ত ও পেরেসট্রয়িকা কি? ঠান্ডা যুদ্ধের প্রশমনে এগুলোর ভূমিকা কি?

গ্লাসনস্ত ও পেরেসট্রয়িকা কী? গ্লাসনস্ত ও পেরেসট্রয়িকা গ্লাসনস্ত ও পেরেসট্রয়িকা : গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রইকা শব্দ দুটি রুশ ভাষার অন্তর্ভুক্ত। গ্লাসনস্ত শব্দের অর্থ মুক্ত চিন্তা এবং পেরেস্ত্রইকা শব্দের অর্থ পুনর্গঠন । গ্লাসনস্ত ও পেরেসট্রয়িকার পটভূমি : ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কার্যকরী করার জন্য কমিউনিস্ট সরকার। এই সরকারের মূলনীতি ছিল সম্পদের উপর সামাজিক মালিকানা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করে একটি শোষণহীন সমাজ ও অর্থ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এই অর্থ ব্যবস্থা ছিল ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থার বিপরীত একটি ব্যবস্থা। ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফলে যে ধানতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই আর্থিক ব্যবস্থা রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষক দেশ আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার মতাদর্শ গত দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্ব অর্থনৈতিক পরিসরের গণ্ডি পেরিয়ে ক্রমশ রাজনৈতিক চেহারা নেয়। ফলে শুরু হয় আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে ঠান্ডা লড়াই বা কোল্ড ওয়ার। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ঠান্ডা লড়াইয়ের ফল